আশুলিয়ায় ভবন মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় একটি স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই স্কুলে সকলেই বিনা বেতনে পড়াশোনা ও পুষ্টিকর খাবার পেত। স্কুল কর্তৃপক্ষ আশুলিয়া থানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান পাননি। ফলে ওই স্কুলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী পড়াশোনা ও পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম গুমাইল এলাকার স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুলটির ভবন মালিকের একক স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের উন্নত এবং মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও পুষ্টির কথা চিন্তা করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হাতে নেন হিরোজ ফর অল নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব থেকে পরিচিত এবং সে-সম্পর্কের কারণে আশুলিয়ার পশ্চিম গুমাইল এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী জয়নাব খানম ইভার মালিকানাধীন ৪শতাংশ জমি ১৫ বছরের জন্য ইজারা (ভাড়া) নেয় ওই প্রতিষ্ঠানটি। পরে নিজস্ব অর্থায়নে ৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা একটি ভবন নির্মাণ করেন হিরোজ ফর অল কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনে "স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুল" নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন এবং প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করান। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে শিক্ষা-কার্যক্রম পাঠদান চালু করেন। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদেরকে বিনামূল্যে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার (দুধ, ডিম, কলা) এবং চিকিৎসা প্রদান করতেন স্কুল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কিছুদিন পর থেকে ইজারাদাতা এবং তার স্বামী মিলে শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অবিভাবকদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকেন। পরে বিষয়টি মৌখিকভাবে বার বার ইজারাদাতা জয়নাব খানম ইভাকে বলা সত্বেও তিনি তা বন্ধ করেননি। এমনকি তিনি বিদ্যালয়ের ব্যানার খুলে ফেলে দেন এবং একপর্যায়ে স্কুলের কেয়ারটেকার ও স্কুলের শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেন। সেই সাথে স্কুলের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র, কম্পিউটার ল্যাব সহ সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণ নিজের দখলে রেখে স্কুলে তালা লাগিয়ে দেন। যার ফলে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব ঘটনায় গত বছর আগস্টের ৯ তারিখ আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ইজারাগ্রহীতা ড. রেহনুমা করিম । ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইজারাদাতা জয়নাব খানম ইভা ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দেয়া হত শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জমির মালিক তাদের ওই স্কুলে যেতে ভয়ভীতি দেখাতো। কিন্তু এরপরেও বাচ্চারা স্কুলে যেত। কারণ বিনামূল্যে পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার ও চিকিৎসা সেবা প্রদান অন্য কোথাও নেই। তাই ভয়ভীতি দেখালেও সেখানে পাঠাতাম। কিন্তু ওই মহিলা স্কুলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে, তাই এখন স্কুল বন্ধ। গরীব মানুষ আমরা, এখন বাচ্চাদের কোথায় পড়াবো জানিনা। পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছি ।
স্বপ্নচূড়া শাফাত মেমোরিয়াল স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক মুছা করিম রিপন জানান, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে একটি আধুনিক কারিকুলামের শিক্ষা প্রদানের লক্ষেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া স্কুলে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিলো, যেখান থেকে স্থানীয় তরুন তরুনীরা বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছিলো । কিন্তু স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জয়নাব ও তার স্বামী ভবনটি দখলে নিতে নানা কৌশল করতে থাকে। এনিয়ে তাকে অন্তত তিনবার লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং প্রতারণার অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে। স্কুলটি খুলে যাতে এর কার্যক্রম শুরু করতে পারি সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তা না হলে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জমির ইজারাদাতা জয়নাব খানম ইভা মুঠোফোনে জানান, এটা ঠিক ১৫ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছি। কিন্তু ভাড়া নেওয়ার পর তার ঠিক মত ভাড়া পরিশোধ করেনি। এমনকি ১২/১৩ মাসের ভাড়া বাকী পড়ায় তাদেরকে বের করে দিয়েছি। এছাড়া তাদেরকে বের করে দেয়ার পর আমাকে ও আমার স্বামাইকে নানাভাবে হয়রানি করেছে তারা। এমনকি মামলা দিয়ে আমার স্বামীকে জেল খাটিয়েছে। হয়রানি আমরা হয়েছি তাদেরকে ভাড়া দিয়ে। তিনি জানান, মামলাটি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এরপরেও নানাভাবে হয়রানি করছে তারা। তবে স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক মুছা করিম রিপন জানান, চুক্তি হওয়ার পর থেকে জয়নাব খানমকে গত ৪ বছর ভাড়া দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এরপরেও সম্পূর্ণ ভবনটি নিজেরা ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে জয়নাব খানম এবং তাঁর স্বামী বিদ্যালয়টি দখল করেন ।
সাভার উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমুশ শিহার মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন এবং এব্যাপারে কেউ তার কাছে এখন পর্যন্ত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।